সমার্থক শব্দের প্রয়োগে বাক্য রচনা

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - শব্দার্থ | NCTB BOOK

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলো একই অর্থ বহন করে। এ রকম সম-অর্থজ্ঞাপক ভিন্ন শব্দকে সমার্থকশব্দ, সমার্থশব্দ, বিকল্পশব্দ বা প্রতিশব্দ বলে।

একই অর্থবহ শব্দের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকে। আকৃতি, ব্যঞ্জনা ও গাম্ভীর্যের দিক থেকে এসব শব্দের পার্থক্য থাকে। সমার্থকশব্দ জানা থাকলে লেখার বা বলার সময় একই শব্দ বার বার ব্যবহার করতে হয় না। ফলে বক্তার বা লেখকের মনের ভাব অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশিত হয়।

নিচে সমার্থকশব্দ বা প্রতিশব্দের কতিপয় দৃষ্টান্ত বাক্যে প্রয়োগ করে দেখানো হলো :

 

১. অগ্নি : ঘরে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনজন মারা গেছে।

    অনল : ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল ।'

    আগুন : “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’

    বহ্নি : ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা। '

    বৈশ্বানর : দেখতে দেখতে নিমতলি বস্তিটি বৈশ্বানরের উদরে চলে গেল৷

 

২. অশ্ব : অশ্বখুরে ধুলা উড়িয়ে অশ্বারোহী ছুটে চলে গেল।

    ঘোটক : জগা ধোপার ঘোটক তার মতোই দুর্বল আর হাড় জিরজিরে।

    ঘোড়া : ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল। '

    তুরঙ্গ : দুরন্ত গতিতে তুরঙ্গ ছুটে চলেছে।

    বাজি : নবাবের আদেশে বাজিপাল বাজি নিয়ে হাজির হলো।

 

৩. অনুমতি : আমার ঘরে ঢুকতে তোমাকে অনুমতি নিতে হবে না।

    আজ্ঞা : আসতে আজ্ঞা হোক।

    আদেশ : ‘আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।

    নির্দেশ : স্কুলের বেতন পরিশোধ করার জন্য প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের নির্দেশ দিলেন।

    হুকুম : ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে পুলিশ আসামিকে কাঠগড়ায় উঠাল।

 

৪. আকাশ : আকাশে আজ মেঘ নেই।

    আসমান : ‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া।'

    গগন : ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।'

    দ্যুলোক : “ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির- বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর।”

    নভ : ‘হেথা শ্যামল দূর্বাদল, নবনীল নভস্তল। '

 

৫. আকাঙ্ক্ষা : মানুষের আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।

    ইচ্ছা ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়৷

    কামনা : বাংলাদেশের কল্যাণ কামনা করি।

    বাঞ্ছা ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।

    সাধ : ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল সকলই ফুরায়ে যায় মা। ’

 

৬. উত্তম : ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে। '

    উপাদেয়: বহুদিন এমন উপাদেয় খাবার খাই নি।

    বরেণ্য : শামসুর রাহমান একজন দেশবরেণ্য কবি।

    ভালো : বকুল খুব ভালো ছেলে।

    শ্রেষ্ঠ : রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কোনটি তা বলা কঠিন৷

 

৭. কুল : বরুণের তিন কুলে কেউ নেই।

    গোত্র : তোমার গোত্র পরিচয় দাও।

    জাত : ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।

    জাতি : ‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি।’

    বর্গ : মানুষে মানুষে বর্ণভেদ থাকা ভালো না।

 

৮. আলয় : শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

    গৃহ ‘গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে। '

    ঘর : ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর। ’

    ধাম : এ ধরাধাম ছেড়ে একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে।

    বাড়ি : ‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর বসতে দেব পিঁড়ে। ’

 

৯. চন্দ্ৰ : আজ চন্দ্রগ্রহণ হবে।

    চাঁদ : ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ’

    শশাঙ্ক : শশাঙ্কে কলঙ্করেখা কে দিয়েছে এঁকে?

    শশধর : শশধরের পূর্ণ আলোয় পৃথিবী ঝলমল করছে।

    শশী : ‘একলা শশী জাগিলে আকাশে বাতায়ন খুলে দিয়ো। '

 

১০. জল : ‘জল পড়ে পাতা নড়ে৷ ’

    পয়ঃ : এ শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো নয়।

    পানি : বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।

    বারি : বর্ষার বারিধারায় পৃথিবী সজীব হয়ে উঠেছে।

    সলিল : ঝড়ে লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় অনেক লোকের সলিল-সমাধি হলো।

 

১১. অর্থ : জগতে অর্থই সকল অনর্থের মূল।

      কড়ি : পার ঘাটেতে এসে দেখি পারের কড়ি নাই।

      টাকা : টাকা হলে বাঘের দুধও মেলে।

      দৌলত : ‘দৌলত পানিতে ফেলে নেকি কর। '

      ধন : ‘ধনের মানুষ বড় নয়, মনের মানুষ বড়। '

 

১২. গাঙ : মরা গাঙে বান এসেছে।

      তটিনী : তটিনীর তরঙ্গে ভাসালাম এবার ভেলা।

      তরঙ্গিণী : ঘর বেঁধেছি শেরি নামক তরঙ্গিণীর তীরে।

      নদী : ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। '

      প্রবাহিণী : প্রবাহিণী ছুটে চলে সাগরের পানে।

 

১৩. জন : জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।

      নর : নর-বানরের যুদ্ধে রাবণ নিহত হয়।

      মানব : বিজ্ঞানীরা মানব জাতির কল্যাণে নিরলস গবেষণা করে চলেছেন।

      মানুষ : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

      লোক : ‘লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা না আমার । '

 

১৪. পর্বত : ‘পর্বতমালা আকাশের পানে চাহিয়া না কহে কথা। ’

      গিরি ‘দুর্গম-গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। '

      পাহাড় : ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। '

      ভূধর : ‘আছ অনল-অনিলে, চির-নভোনীলে ভূধর সলিলে গহনে।’

      শৈল : শৈলশৃঙ্গ তুষারে ঢাকা পড়েছে।

 

১৫. পাখি ‘পাখিসব করে রব, রাতি পোহাইল। ’

      খাগ : ‘ময়ূর-ময়ূরী সারী-শুক আদি খগ। ’

      খেচর : খেচর চলেছে উড়ে নৈঋত কোণে।

      পঙ্খি : ‘উইড়া যায়রে হংসপঙ্খি, পইড়া রয়রে ছায়া। '

      বিহঙ্গ : ‘যাবার সময় হলো বিহঙ্গের। ’

 

১৬. পৃথিবী : পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।

      জগৎ এই জগতে আমার আপন বলতে কেউ নেই।

      ধরা : ‘শরতে ধরাতল শিশিরে ঝলমল। ’

      বসুন্ধরা : ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।”

      বিশ্ব : ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। "

      ভুবন : ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’

 

১৭. ফুল : সবাই ফুল পছন্দ করে।

      কুসুম 'কাননে কুসুম-কলি সকলই ফুটিল। '

      পুষ্প : ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। ’

      প্রসূন : মরি মরি! এ কী প্রসূন শোভায় সেজেছে আমার গৃহ!

 

১৮ : বন : বন্যেরা বনে সুন্দর।

        অটবি : ‘অটবি বায়ুবশে উঠিত সে উছসি।'

        অরণ্য : ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর। '

        জঙ্গল : জঙ্গলে বাঘ থাকে।

        বনানী : ‘স্তব্ধ শরৎ দুপুরে ঘন বনানীর মধ্যে ঘুঘুর ডাক শুনিয়াছে। ’

 

১৯. বাতাস : ঝড়ো বাতাস সব লণ্ডভণ্ড করে দিল।

       পবন : পবনবেগে সে গাড়ি চালিয়ে দিল।

       বায় : ‘দখিনা বায় মাগিছে বিদায় শাল বীথিকার কাছে। ’

       বায়ু : ডাক্তার তাকে বায়ু পরিবর্তন করতে বলেছেন।

       সমীর : ‘গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি। '

 

২০. বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন এখন অকল্পনীয়।

       ক্ষণপ্রভা : ক্ষণিকের ক্ষণপ্রভায় তাকে এক ঝলক দেখলাম।

       তড়িৎ : লোকটি তড়িতাহত হয়ে মারা গেল।

       বিজলি বিজলিবাতিতে পুরো শহরটা যেন চমকাচ্ছে। :

       বিজুরি : ‘বিজুরি ঝলসে যেন মনে। ”

 

২১. রাত : দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছি, সুখের নাগাল পাই না।

      নিশি : নিশি ভোর হয়েছে, এবার আঁখি খোল।

      নিশীথ : ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে। '

      নিশীথিনী : ‘মধুর হলো বিধুর হলো মাধবী নিশীথিনী। '

      যামিনী : ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না৷ ”

 

২২. রাজা : এক দেশে ছিল এক রাজা।

      অধিপতি : বাবর ছিলেন ভারতের প্রথম মুঘল অধিপতি।

      নৃপতি : আলেকজান্ডারের মতো বীর নৃপতি বিশ্বে বিরল।

      ভূপতি : ভূপতিকে দেখে মন্ত্রিবর্গ উঠে দাঁড়ালেন।

      সম্রাট : সম্রাট অশোক ছিলেন জগদ্বিখ্যাত বীর।

 

২৩. সাগর : এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা।

       জলধি উত্তাল জলধি বক্ষে কার ক্ষুদ্র তরীখানি নির্বিঘ্নে চলেছে পারে?

       পাথার : অকূল পাথারে আমি ভাসিয়েছি আমার তরী।

       সমুদ্র : সাত সমুদ্র তের নদীর পারে আছে এক রূপকথার দেশ।

       সিন্ধু : ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সংগীত ভেসে আসে!”

 

২৪. সুন্দর : আমাদের দেশটি খুব সুন্দর।

       মনোরম: মনোরম ধরণীর তুলনা হয় না।

       মনোহর : তার মনোহর চেহারা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়৷

       রমণীয় : বাহ! কী রমণীয় স্থান!

       শোভন : তার পোশাক-আশাক চাল-চলন বেশ শোভন।

 

২৫. সোনা : সোনা অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু। 

       কনক : ‘কনককষিত কান্তি কমনীয় কায়। ”

       কাঞ্চন : প্রাচীনকালে আমাদের দেশে কাঞ্চন মুদ্রার প্রচলন ছিল। :

       স্বর্ণ : স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী।

       হিরণ : ‘হিরণ জরির ওড়না গায়। ’

 

২৬. সূর্য ‘পূর্বদিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্তলাল। ' :

       অরুণ : অরুণ কিরণ দেয় মধ্যগগনে৷

       দিবাকর: মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে দিবাকর।

       ভানু : ভানুর কৃপায় শীতের প্রকোপ থেকে উলঙ্গ ছেলেটি রক্ষা পেল।

       রবি : 'রবির কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।”

 

২৭. সৰ্প : ‘সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো।’

       অহি : অহি-নকুলের যুদ্ধ লেগেছে।

       আশীবিষ: ‘কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।'

       নাগ : ‘সর্বাঙ্গে দংশিল মোরে নাগ নাগবালা। '

       ফণী : প্রবাদ আছে- ফণীর মাথায় মণি থাকে।

       সাপ : বাপরে বাপ! কত্তো বড় সাপ!

 

২৮. মাথা : তার মাথায় অনেক চুল

       মস্তক : মস্তিষ্ক আছে বলেই মস্তকের দাম।

       মুণ্ডু : কথায় কথায় সে কেন তোমার মুণ্ডুপাত করে?

       মুড়ো : বাবা মাছের মুড়োটি ছেলের পাতে তুলে দিলেন।

       শির : ‘শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির। '

 

২৯. চোখ : তোমার চোখ দুটি খুব সুন্দর।

       আঁখি : ‘তোমার আঁখির মতো আকাশের দুটি তারা। '

       চক্ষু : চক্ষু থাকতে অন্ধের মতো চলো কেন?

       নয়ন : ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল। '

       নেত্র : তার নেত্র থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়তে লাগল।

 

৩০. কান : কান টানলে মাথা আসে।

       কর্ণ : তার কথায় কর্ণপাত করো না। 

       শ্ৰুতি : তোমার কথা বাবার কর্ণগোচর হয়নি।

       শ্রুতিপথ : চিৎকার করে বলো নয়তো তার শ্রুতিপথে ঢুকবে না।

Content added || updated By
Promotion